Home ইতিহাস ও জীবনী শায়েখুল হিন্দের সব গুণাবলী আল্লামা কাসেমী (রাহ.)এর মাঝে খুঁজে পাই: ড. মুশতাক

শায়েখুল হিন্দের সব গুণাবলী আল্লামা কাসেমী (রাহ.)এর মাঝে খুঁজে পাই: ড. মুশতাক

আবু তালহা তোফায়েল: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.) মরেও অমর হয়ে আছেন। তিনি পরপারে পাড়ি দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর আদর্শ আমাদের মাঝে বিদ্যমান আছে। সত্যিকার অর্থে যাঁরা নিজেদের সবকিছু বিলীন করে মুসলিম উম্মাহ, দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন, তাঁরা মরে নাই৷ যেভাবে শায়খুল হিন্দ (রাহ.), গাঙ্গুহী (রাহ.), মাওলানা ইলিয়াস (রাহ.), শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি (রাহ.) মরে নাই। শুধুমাত্র তাঁদের দেহটা আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁদের আদর্শ ও কর্মে আমাদের মাঝে এখনো তাঁরা বেঁচে আছেন। ঠিক সেভাবেই আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.) আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন তাঁর আদর্শ ও কর্মে। আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীকে বাংলার মাদানি বলা হত। তবে আমি বাংলার মাদানি বলি না। সবার ভিন্ন নজরিয়া থাকতে পারে, তাই আমারও আলাদা একটা নজরিয়া হচ্ছে বা আমি যতটুকু কাসেমী (রাহ.)কে নিয়ে রিসার্চ করেছি। তাঁর ফল দাঁড়িয়েছে যে, তিনি ‘বাংলার শায়খুল হিন্দ’ ছিলেন। ভারতবর্ষে শায়খুল হিন্দ (রাহ.)এর যেরকম অবদান ছিল এবং তিনি যেভাবে সবদিক থেকে পরিপূর্ণ একজন ব্যক্তি ছিলেন, ঠিক সেই ভূমিকায় ছিলেন আল্লামা কাসেমী (রাহ.)।

২৮ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সিলেটে দি আগ্রা কমিউনিটি সেন্টারে আবনায়ে বারিধারা সিলেট বিভাগের উদ্যোগে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ. এর জীবন ও চিন্তাধারা শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে- শায়খুল হাদীস ডা. মুশতাক আহমদ উপরিউক্ত কথাগুলো বলেন।

তিনি আরও বলেন, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)কে জীবিত থাকা অবস্থায় মানুষ যতটুকু চিনেছে, তাঁর মৃত্যুর পর আরও বেশী চিনেছে, তাঁর সম্পর্কে জেনেছে। আমাদের আকাবিরে দেওবন্দের মাঝে যাঁদের নামই লোকমুখে বেশী উচ্চারণ হচ্ছে, তাঁদের সম্পর্কে তাঁদের মৃত্যুর পর মানুষ বেশি জেনেছে ও বুজেছে। কাসেমী সম্পর্কে আগামী ৫০ বছর পর মানুষ যেভাবে চিনবে, জানবে; তা কল্পনাও করা যায় না। কারণ আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রাহ.)এর শাগরেদ ও মুর্শিদরা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে কাজ করছে৷ আজ থেকে ৫০ বছর পর যেদিকেই মানুষ থাকাবে, যেদিকেই মানুষ অগ্রসর হবে, সেদিকেই কাসেমীর সন্তানদের দেখতে পাবে৷ এটা আল্লামা কাসেমীর অদূর দূরদর্শিতার প্রমাণ; যা শায়খুল হিন্দ (রাহ.)এর এই গুণ ছিলো।

ড. মুশতাক আরও বলেন, আল্লামা কাসেমী (রাহ.)এর সবচেয়ে বড় গুণ ছিলো সারা দুনিয়া যদি বাতিলের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তিনি একা হকের ঝাণ্ডা নিয়ে অপর পক্ষে থাকবেন। যার প্রমাণ আমি অনেকগুলো দিতে পারি৷ তিনি কখনো লোভে বা ক্ষমতাসীন দলের রক্তচক্ষুকে ভয় করে আপোষকামিতায় ছিলেন না; যার ফলেই মৃত্যু পর্যন্ত কারও কোনো উপঢৌকন না নিয়েই দ্বীনি ও জাতীয় কাজগুলো আঞ্জাম দিয়ে গেছেন।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি আরও বলেন, শুকরানা মাহফিলে আমি নিজে বারবার কল দিয়ে বলছি, হুজুর- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থাকবেন, আপনি আসলে অনেক ফায়দা হবে; উত্তরে তিনি বললেন, মাওলানা- আমার তবিয়তে দিচ্ছে না, মন মানছে না সেখানে যেতে; মেজাজের খেলাফ মনে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ঠিকই আসলেন না।

কাসেমীকে বলা হয় ‘মানুষ গড়ার যোগ্য কারিগর’। সত্যিকার অর্থেই কাসেমী রহঃ ছিলেন একজন সুদক্ষ মানুষ গড়ার কারিগর। ছাত্রদের দিকে তাকালে বুঝতে পারতেন এই ছাত্রের দ্বারা কি কাজ আঞ্জাম দেওয়া যাবে। যে, যে কাজের জন্য পারফেক্ট মনে করতেন, সেই কাজে লাগিয়ে দিতেন।

একটা ছাত্র দাওরা সম্পন্ন করার পর কীভাবে তাকে দেওবন্দে পাঠানো যায়, টাকা পয়সাসহ যা যা দরকার সবকিছু নিয়ে চিন্তা ফিকির করে দেওবন্দে পাঠাতেন। ছাত্রদের নিয়ে এতো ফিকির (চিন্তা) দ্বিতীয় কোনো উস্তাদের এরকম নজির দেখিনি। মানুষ চেনা খুব দায়। সবাই চিনতে পারে না কার ভেতরে কোন প্রতিভা আছে, কোন কাজের জন্য সে পারফেক্ট, সেই মহা গুণের অধিকারী ছিলেন আল্লামা কাসেমী (রাহ)এর মাঝে; এটাও শায়খুল হিন্দ (রাহ.)এর গুণ ছিলো।

তিনি কাসেমী (রাহ.)এর স্মৃতিচারণ করে বলেন, আল্লামা কাসেমী (রাহ.) না থাকলে হয়তো আমি ড. মুশতাক আলোর মুখ দেখতাম না; এরকম হাজারও মুশতাক গড়ে উঠতো না। আমাদের পিছে হুজুরের যে মেহনত, তা বলে শেষ করার নয়। ঢাকা ফরিদাবাদে হুজুরের কাছে পড়েছি। তখন দরসে কোনো আনুসাঙ্গিক কথা আসলেই দেওবন্দি বুজুর্গদের নিয়ে দৃষ্টান্ত দিতেন।

আমরা পূর্বে এমন বুজুর্গদের কথা বা কাজ সম্পর্কে জানি-ই না, এমন সব বুজুর্গদের পরিচয় করিয়ে দিতেন। টার্গেট একটাই যে, দেওবন্দকে ভালোবাসা এবং দেওবন্দের প্রতি হৃদয়টা মাইল হওয়া। তখন হুজুর (কাসেমী রাহ.) আমাদেরকে ‘দেওয়াল পত্রিকা’ বের করার জন্য বলেন। এই দেওয়াল পত্রিকার নামটাই শুনিনি, তখন তিনি আমাদেরকে নিয়ম দেখালেন আর আমরা দেওয়াল পত্রিকার কাজ করে লেখালেখির উপর যথেষ্ট যোগ্যতা অর্জন করি। হুজুর সবসময় ছাত্রদের একটা কর্মসূচী দিয়ে রাখতেন। একদিন হুজুর আমাকে এশার নামাজ পরে রুমে যাওয়ার জন্য বলেন, আমি রুমে গেলে তিনি ৫০ পৃষ্ঠার একটা বই তুলে দিলেন এবং বললেন বইটি পড়ে আগামীকাল এর খোলাসা (সারমর্ম) আমাকে বলতে হবে। এভাবে হুজুর ছাত্রদের উন্মুক্ত রেখে একটা কর্মসূচি দিতেন। প্রতিটি কাজে এতো দূরদর্শিতার প্রমাণ দিতেন, সময় যত গড়িয়ে যায় তত এর ফল পাওয়া যায়। আমার প্রতিটি কাজে হুজুরের পরামর্শ নিতাম এবং কাসেমী ছিলেন আমার শফিক উস্তাদ, মেহেরবান উস্তাদ। আমার বিশ্বাস যদি আমাদের জীবন পরিচালনায় তাঁর আদর্শগুলো বেছে নেই। তাহলে আমরা একটা সমৃদ্ধ সমাজ উপহার দিতে পারব; ইনশাআল্লাহ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।